১৫০ টাকার লোভে যেভাবে ২৮ লাখ টাকা খোয়ালেন চট্টগ্রামের নারী

 

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বাসিন্দা রুমানা আক্তার (ছদ্মনাম)। পেশায় একজন সরকারি চাকরিজীবী।

সাড়ে পাঁচ মাস আগে গত ৮ নভেম্বর অচেনা এক নম্বর থেকে ইংরেজিতে একটি খুদেবার্তা আসে তার ব্যক্তিগত মুঠোফোন নম্বরে। যেখানে বলা হয়- ‘প্রিয়, আপনি ইন্টারভিউ পাস করেছেন। এখানে যান, দিনে ২০০০ টাকা বেতন পাবেন।’ সঙ্গে যুক্ত করা হয় একটি হোয়াটসঅ্যাপ লিংক।

লিংকটিতে প্রবেশ করতেই রুমানা দেখতে পান- তিনটি ভিডিও লিংক শেয়ারের কথা জানানো হয় সেখানে। ভিডিওগুলো লাইক ও শেয়ার করলে তিনি পাবেন ৫০ করে মোট ১৫০ টাকা।

কথামতো তিনটি ভিডিও লাইক-শেয়ার করতেই রুমানার বিকাশ নম্বরে পাঠানো হয় ১৫০ টাকা। একইদিন একইভাবে কাজ করলে পাঠানো হয় আরো ১৪০০ টাকা। এভাবেই প্রতারক চক্রের ফাঁদে প্রথম পা রাখেন রুমানা। এরপর বিভিন্ন ধাপে ঘুরিয়ে রুমানাকে একটি টেলিগ্রাম গ্রুপে নিয়ে যায় চক্রটি। সেখানেও দেওয়া হয় একই ধরনের প্রস্তাব। ‘যারা কাজ করেছেন, সবাই টাকা পেয়েছেন’ এমন বিশ্বাস অর্জনের জন্য লেনদেনের বিভিন্ন স্ক্রিনশটও শেয়ার করা হয় গ্রুপে।

‘অ্যাডভান্স বেনিফিট ট্যাক্স’-এর কথা বলে ১৬০০ টাকা বিনিয়োগ করলে ২৪০০ টাকা, এক গুণ টাকা বিনিয়োগ করলে মিলবে দ্বিগুণ টাকা- রুমানাকে এমন আশ্বাস দেয় প্রতারক চক্র। আশ্বাস পেয়ে রুমানা বিনিয়োগে রাজি হলে তাকে একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি অ্যাকাউন্টের লিংক দেওয়া হয়। সেখানে একটি অ্যাকাউন্ট করে এক বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠাতে বলা হয় তাকে। একের পর এক নম্বর। একে একে লেনদেন। অ্যাকাউন্টে জমানো টাকা তুলতে গিয়ে রুমানা দেখেন- অ্যাকাউন্ট লক। পরে সমস্যা সমাধানের জন্য আবারো বিনিয়োগ করতে বলা হয় তাকে। তবুও সমস্যা সমাধান না হওয়ায় সন্দেহ হয় রুমানার।

এদিকে, টাকা পরিশোধের ভুয়া স্ক্রিনশট দিতে থাকে প্রতারক চক্র। এভাবে একাধিক দফায় ১২৫টি বিকাশ ও দুটি নগদ নম্বরে কৌশলে ২৭ লাখ ৯৩ হাজার ১৭৫ টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি। হাতছাড়া হওয়া ২৭ লাখ ৯৩ হাজার ১৭৫ টাকার মধ্যে দুই লাখ ৯৩ হাজার ১৭৫ টাকা রুমানার নিজের এবং বাকি ২৫ লাখ টাকা ধার করা।

প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রথমে নগরের বাকলিয়া থানা ও পরে নগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের শরণাপন্ন হন রুমানা। সেখান থেকে আশানুরূপ সহযোগিতা না পেয়ে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) আদালতে মামলা করেন তিনি।

এদিন দুপুরে চট্টগ্রাম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসেন জুনায়েদের আদালতে প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে ডিজিটাল প্রতারণার অভিযোগে মামলাটি করা হয়। মামলাটি গ্রহণ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে চক্রটির সদস্যদের চিহ্নিত করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দেন আদালত। মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হয়। যেগুলো সবই ছদ্মনাম।

এ প্রসঙ্গে মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ বলেন, দেশি-বিদেশি এ ধরনের সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র শুধু নারী নয়, দেশের বিভিন্ন জায়গাতেই এভাবে প্রতারণার জাল বিছিয়ে নিরীহ মানুষের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রতারক চক্রের সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে না পারলে ভুক্তভোগীর সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলবে। এটাই আদালতকে বুঝিয়েছি।

ভুক্তভোগী নারী রুমানা আক্তার বলেন, বর্তমানে আমি খুব শোচনীয় পর্যায়ে রয়েছি। মানসিকভাবেও খুব হতাশ। আমি প্রতারকদের ১২৩টি বিকাশ ও দুটি নগদ নম্বরে সমস্ত টাকা পাঠিয়েছি। কোন কোন নম্বর থেকে টাকা পাঠানো হয়েছে তাও জানিয়েছি। আমি আদালতের কাছে প্রার্থনা করেছি ওই সব নম্বরের লেনদেন স্থগিত করে আইনি প্রক্রিয়ায় যেন আমার টাকা ফেরত পাই।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url