চাঁদের আলোয় ধান কাটছেন কৃষকরা
সারাদেশে চলছে তীব্র দাবদাহ। এতে প্রভাব পড়েছে জনজীবনে। আর এই দাবদাহের ফলে বেশ বিপাকে পড়েছেন শরীয়তপুরের বোরো ধান চাষিরা। অতিরিক্ত গরমে দিনের বেলা পারছেন না পাকা ধান কাটতে। তাই বাধ্য হয়ে ধান কাটার সময় হিসেবে রাতের বেলাকেই বেছে নিয়েছেন অনেক চাষি।
শরীয়তপুর জেলা কৃষি অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার ছয়টি উপজেলায় ২৫ হাজার ৫২৬
হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৫৮৫ হেক্টর, নড়িয়া উপজেলায় ৫ হাজার ৪২০ হেক্টর, জাজিরা উপজেলায় ১ হাজার ১৫১ হেক্টর, ভেদরগঞ্জ উপজেলার ৪ হাজার ৬৫০ হেক্টর, ডামুড্যা উপজেলায় ৩ হাজার ৮২১ হেক্টর ও গোসাইরহাট উপজেলায় ৪ হাজার ৮৯৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।
গত বছর জেলায় আবাদ করা হয়েছিল ২৫ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন হয়েছিল এক লাখ ১৫ হাজার ৯০৬ মেট্রিক টন। গত বছরের তুলনায় এ বছর উৎপাদন বেড়েছে ৩৩৬ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে জেলায় বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৬২৭ মেট্রিক টন। তবে একটানা চলা প্রচণ্ড তাপদাহে ধানের উৎপাদনে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটবে বলে ধারণা করছে কৃষি বিভাগ।
বেশ কয়েকটি ধানের জমিতে সরেজমিনে দেখা যায়, পুরো মাঠ জুড়ে উঁকি দিচ্ছে সোনালি ধান। অধিকাংশ জমির ধান এখন পেকে গেছে। দিনের বেলা প্রখর রৌদ্রের তাপ থাকায় রাতের বেলা চাঁদের আলোতে ধান কাটছেন চাষিরা।
সদর উপজেলার আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের চর কাশাভোগ এলাকার চাষি মিজান শিকদার। এ বছর ৮০ শতাংশ জমিতে করেছেন বোরো ধান চাষ। ধানের ফলন ভালো হওয়ায় অনেকটা খুশি এ চাষি। তবে বিপত্তির সৃষ্টি হয় ধান পাকার পর। প্রচণ্ড দাবদাহে দিনের আলোতে ধান কাটতে রাজি হচ্ছিল না অনেক কৃষাণ। পরে সিদ্ধান্ত নেন রাতেই কাটা হবে জমির ধান। যেই ভাবা সেই কাজ ৪ জন কৃষাণ নিয়ে চাঁদের আলোকে সঙ্গী করে ধান কাটা শুরু করেন। রাত ৯ টা থেকে শুরু হয়ে ভোর ৫ টা পর্যন্ত চলে এ ধান কাটা। এতে অনেকটাই স্বস্তি মিলেছে তার।
মিজান শিকদার বলেন, ‘আমরা সব সময় দিনের বেলাতেই ধান কাটি। এ বছর প্রচণ্ড তাপের কারণে দিনের বেলা কৃষাণ পাওয়া সম্ভব হয়নি। এই নিয়ে আমি বেশ বিপাকে পড়ে যাই। পরে আমার এক ভাই রাতের বেলা ধান কাটার উপদেশ দিলো। কৃষাণদের বলতেই তারা রাজি হয়ে গেল। যখন দিনের গরম কমে যায় তখন আমরা ধান কাটার কাজ শুরু করি।’
আরও পড়ুন: এবার হিটস্ট্রোকে ব্যবসায়ীর মৃত্যু
আংগারিয়া এলাকার ধান চাষি আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি রাতের বেলায় কৃষাণ নিয়ে ৪০ শতাংশ জমির ধান কাটার কাজ শুরু করেছি। মূলত দিনের বেলা হিটস্ট্রোকের ভয়ে অনেকেই ধান কেটে দিতে রাজি হয়নি। পরে রাতের বেলা ধান কাটা শুরু করি। রাতের বেলা জমিতে যেমন বাতাস থাকে তেমনি ঠান্ডাও থাকে। আমি মনে করি এই সময়ে রাতেই ধান কাটার উপযুক্ত সময়।’
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) মোহাম্মদ রিয়াজুর রহমান বলেন, প্রচণ্ড দাবদাহে দিনের বেলা ধান কাটা আমাদের কৃষকদের জন্য খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ অতিরিক্ত গরমে কাজ করলে তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। তাই যারা এই গরমে মাঠে কাজ করবেন তাদের প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করার পাশাপাশি গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতে হবে।
রাতের বেলা ধান কাটার বিষয়ে চাষিদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের জেলার বিভিন্ন জায়গায় রাতে ধান কাটা হচ্ছে। এতে হিটস্ট্রোক এড়ানো সম্ভব হচ্ছে। তবে এসকল চাষিরা যদি আমাদের হারভেস্টার মেশিনগুলো ব্যবহার করেন তাহলে আরও দ্রুত ধান সংগ্রহ করতে পারবেন।